হিজরি সনের শেষ মাস জিলহজ। এই মাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো ১০ তারিখে ঈদুল আজহা আদায় করে আল্লাহর উদ্দেশে কোরবানি করা। তবে, জিলহজ মাসের চাঁদ দেখার পর ঈদুল আজহার নামাজ পর্যন্ত এমন কিছু কার্যাবলি আছে যা পালন করলে আমরা অধিক সওয়াব লাভ করতে পারি এবং সহজে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি।
জিলহজ মাসের প্রথম ৯ দিনে নফল রোজা পালন করা এবং বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজকার, তাসবিহ-তাহলিল, তওবা ও ইস্তিগফারের মাধ্যমে রাত অতিবাহিত করা।
এ প্রসঙ্গে জামিউত তিরমিযিতে বর্ণিত আছে, মহানবী (সা.) বলেন, ‘জিলহজ মাসের ১০ দিনের ইবাদত আল্লাহর নিকট অন্য দিনের ইবাদতের চেয়ে বেশি প্রিয়। প্রতিদিনের রোজা এক বছরের রোজার ন্যায় আর প্রতি রাতের ফজিলত লাইলাতুল কদরের ন্যায়।’
অনুরূপভাবে ঈদের দিন কোরবানির আগে কিছু না খেয়ে কোরবানির গোশত দিয়ে খাওয়া সুন্নত। যাঁদের নামে কোরবানি দেওয়া হয়, তাঁদের জন্য জিলহজের চাঁদ দেখা থেকে কোরবানি না করা পর্যন্ত নখ, চুল না কাটা মুস্তাহাব।
এ প্রসঙ্গে মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যাঁরা কোরবানি করবে, তারা যেন চুল ও নখ না কাটে’।
তবে কোরবানি হয়ে যাওয়ার পর নখ-চুল কাটতে পারবে। ৯ জিলহজ পবিত্র আরাফার দিন। এ দিনে হাজিগণ আরাফা ময়দানে একত্র হয়ে ইমামের ভাষণ শ্রবণ করেন এবং মহান রবের দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। যাঁরা অন্য দিনে রোজা রাখতে পারেন না তাঁরা যেন কমপক্ষে এ দিনে রোজা রাখেন। কারণ, এ দিনে রোজা রাখা আরও বেশি সওয়াবের কাজ।
এ প্রসঙ্গে মহানবী (সা.) বলেন, ‘আমি আশাবাদী যে আল্লাহ তাআলা এ দিনে রোজা পালনকারীকে বিগত ও পরবর্তী এক বছরের গোনাহ মাফ করে দেন।’ ৯ তারিখ ফজর থেকে ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত তাকবির বলা। এ দিনগুলোকে আইয়ামে তাশরিক বলা হয়। প্রতিটি ফরজ নামাজের পর তাকবির দেওয়া ওয়াজিব।
তাকবিরটি হলো, ‘আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবর আল্লাহু আকবর ওয়া লিল্লাহিল হামদ’।
১০, ১১ ও ১২ জিলহজের যেকোনো দিন, কোনো ব্যক্তির মালিকানায় যদি নিত্যপ্রয়োজনের অতিরিক্ত সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা অথবা এর সমমূল্যের সম্পদ থাকে, তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। সে পুরুষ হোক আর মহিলা হোক। কোরবানি করার নির্দেশ দিয়ে মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে’।
১০ জিলহজ তারিখে ঈদের নামাজ পড়া, অতঃপর কোরবানি করা ওয়াজিব।
ঈদগাহে তাকবির দিতে দিতে এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া এবং অন্য রাস্তা দিয়ে প্রত্যাবর্তন করাও সওয়াবের কাজ।
এ দিনে ফজর থেকে জোহর নামাজ পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ে ঈদুল আজহার নামাজ এবং কোরবানি করার চেয়ে আল্লাহর নিকট আর কোনো উত্তম ইবাদত নেই।
কোরবানি করার অনেক ফজিলত রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে হাদিসে বর্ণিত আছে যে একদা সাহাবিগণ রাসুলুল্লাহ (সা.)–কে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! এ কোরবানি কী? তিনি বললেন, এটি তোমাদের পিতা ইবরাহিম (আ.)–এর সুন্নত। তাঁরা পুনরায় প্রশ্ন করলেন, এতে আমাদের জন্য কী কল্যাণ নিহিত আছে? তিনি বললেন, এর প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকি রয়েছে। তাঁরা আবার প্রশ্ন করলেন, ছাগলের পশমেও কি তা–ই নেকি আছে? উত্তরে তিনি বললেন, ছাগলের প্রতিটি পশমের বিনিময়েও একটি করে নেকি রয়েছে।
পাঁচ দিন রোজা রাখা হারাম। এটি অর্থাৎ দুই ঈদের দিন এবং ঈদুল আজহার পরের তিন দিনের রোজা রাখা হারাম। এ পাঁচ দিনের মধ্যে রোজা রাখা যে কেউ পাপী হবে। উল্লেখ্য, উক্ত পাঁচ দিনের চার দিনই ঈদুল আজহার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এ কারণে, এ ঈদে কোরবানি দেওয়া হয় এবং কোরবানির গোশত প্রায় ১৩ তারিখের মধ্যে শেষ করাও মুস্তাহাব। এ বিষয়ে মহানবী (সা.) সাহাবিদেরকে উৎসাহিত করেছেন।
প্রিয় পাঠকগণ,
জিলহজ মাসের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদত হলো সামর্থ্যবান ব্যক্তির জন্য হজ–ওমরাহ আদায় করা। যাঁরা একবার হজ আদায় করেছেন, তাঁদের জন্য পরবর্তী সময়ে যেকোনো সময়ে হজ করা নফল হয়ে যায়।
জিলহজ মাস অনেক ফজিলত লাভের মাস। এ মাসে যেসব ইবাদত–বন্দেগি রয়েছে, তা প্রতিটি মুসলমানের জন্য সম্পাদন করা খুবই মর্যাদার কাজ। ইবাদতকারী বান্দাদের এসব কাজ করে অধিক সওয়াব লাভ করে এবং মহান রবের নৈকট্য লাভে ধন্য হন।