কত টাকা থাকলে কোরবানি দিতে হবে?
ইসলামী শরিয়তের কুরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। হিজরতের পর প্রতি বছর রাসুলুল্লাহ (সা.) কুরবানি করেছিলেন। তিনি কখনও কুরবানি পরিত্যাগ করেননি; বরং কুরবানি পরিত্যাগকারীদের ওপর অভিসম্পাত করেছিলেন।
কার ওপর কোরবানি ওয়াজিব
প্রাপ্তবয়ষ্ক, সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন প্রত্যেক মুসলমান নর-নারী মুকিম ব্যক্তি, যে ১০ জিলহজ সুবহে সাদিক থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে, তার ওপর কুরবানি করা ওয়াজিব হবে।
হিসাবযোগ্য পণ্য
স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত ভরি। আর রুপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন ভরি। আর অন্যান্য বস্তুর ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার সমমূল্যের সম্পদ।
স্বর্ণ বা রুপার কোনো একটি যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না হয়, তবে স্বর্ণ-রুপা উভয়টি মিলে কিংবা এর সঙ্গে প্রয়োজন-অতিরিক্ত অন্য বস্তুর মূল্য মিলে সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার সমমূল্যের হয়ে যায় সে ক্ষেত্রেও কুরবানি ওয়াজিব হবে।
স্বর্ণ-রুপার অলঙ্কার, নগদ অর্থ, যে জমি বার্ষিক খোরাকির জন্য প্রয়োজন হয় না এবং প্রয়োজন অতিরিক্ত আসবাবপত্র— এসবই কুরবানির নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য।
এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনের অতিরিক্ত টাকা-পয়সা, সোনা-রুপা, অলঙ্কার, বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজনে আসে না এমন জমি, প্রয়োজনের অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় সব আসবাবপত্র, পোশাক-পরিচ্ছেদ, আসবাবপত্র, তৈজসপত্রও ধর্তব্য হবে। সে সম্পদের ওপর এক বছর অতিক্রম হওয়া শর্ত নয়।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) বর্তমান দর অনুযায়ী ৫২ দশমিক ৫ তোলা ২২ ক্যারেট রুপার দাম হলো ৮৮ হাজার টাকার মতো। (এখানে অলংকার হিসেবে দাম ধরা হয়নি। কারণ, এ ক্ষেত্রে অলংকার তৈরির মজুরি অন্তর্ভুক্ত থাকে। কিন্তু কুরবানি ওয়াজিব হয় শুধু রুপার ওপর। এ জন্য রুপার বিস্কুটের দাম ধরা হয়েছে)।
তবে কুরবানি ওয়াজিব হয় ১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সাড়ে ৫২ ভরি রুপার যে দাম থাকবে, তার ওপর ভিত্তি করে।
তথ্যসূত্র: বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬,আলমুহীতুল বুরহানি ৮/৪৫৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪০৫
কোরবানির
ফজিলত
উম্মুল মুমিনীন হজরত আয়েশা (রা.)
থেকে বর্ণিত, রাসুলু (সা.) ইরশাদ করেছেন,
‘কোরবানির দিনের আমলগুলোর মধ্য থেকে পশু
কোরবানি করার চেয়ে কোনও
আমল আল্লাহ তাআলার কাছে অধিক প্রিয়
নয়। কেয়ামতের দিন এই কোরবানিকে
তার শিং, পশম ও
ক্ষুরসহ উপস্থিত করা হবে। আর
কোরবানির রক্ত জমিনে পড়ার
আগেই আল্লাহ তাআলার কাছে কবুল হয়ে
যায়। সুতরাং তোমরা সন্তুষ্টচিত্তে কোরবানি করো।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস:
১৪৯৩)
কোরবানি
না করলে হুঁশিয়ারি
সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে
ব্যক্তি কোরবানি করে না, তার
ব্যাপারে হাদিস শরিফে কঠোর হুঁশিয়ারি এসেছে।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.)
থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন,
‘যার কোরবানির সামর্থ্য আছে, তবু সে
কোরবানি করলো না, সে
যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’ (মুসনাদে
আহমদ ২/৩২১)
কোরবানির
পশু কেমন হবে
কোরবানির পশু দোষ-ত্রুটিমুক্ত হতে হবে। পশুর যেসব দুর্বলতার কারণে কোরবানি দেওয়া যাবে
না, তা এখানে তুলে ধরা হলো—অন্ধ, বধির, অত্যন্ত দুর্বল ও জীর্ণ-শীর্ণ, জবাইয়ের স্থান
পর্যন্ত হেঁটে যেতে অক্ষম, লেজের বেশির ভাগ অংশ কাটা, জন্মগতভাবে কান না থাকা, কানের
বেশির ভাগ কাটা, গোড়াসহ শিং উপড়ে যাওয়া, পাগল হওয়ার কারণে ঘাস-পানি ঠিকমতো না খাওয়া,
বেশির ভাগ দাঁত না থাকা, রোগের কারণে স্তনের দুধ শুকিয়ে যাওয়া, ছাগলের দুটি দুধের যেকোনও
একটি কাটা হওয়া, গরু বা মহিষের চারটি দুধের যেকোনও দুটি কাটা হওয়া।
কোরবানি
পশুর বয়স
উট কমপক্ষে পাঁচ বছরের হতে
হবে। গরু ও মহিষ
কমপক্ষে দুই বছরের হতে
হবে। আর ছাগল, ভেড়া
ও দুম্বা কমপক্ষে এক বছরের হতে
হবে। তবে ভেড়া ও
দুম্বা যদি এক বছরের
কিছু কমও হয়, কিন্তু
এমন হৃষ্টপুষ্ট যে দেখতে এক
বছরের মতো মনে হয়,
তাহলে তা দ্বারা কোরবানি
করা জায়েজ। অবশ্য এ ক্ষেত্রে কমপক্ষে
ছয় মাস বয়সী হতে
হবে। তবে ছাগলের বয়স
এক বছরের কম হলে তা
দ্বারা কোরবানি জায়েজ হবে না। আর
নর-মাদা উভয় পশুই
কোরবানি করা যায়।
তথ্যসূত্র:
বাদায়েউস সানায়ে, মুয়াত্তা মালেক, ফতোয়ায়ে কাজিখান, আলমুহিতুল বুরহানি, ফতোয়ায়ে তাতারখানিয়া ইত্যাদি।
লেখক:
গণমাধ্যমকর্মী; শিক্ষক, মারকাযুদ দিরাসাহ আল ইসলামিয়্যাহ, ঢাকা।